সংকট সমস্যায় জর্জরিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যথার দান মেডিকেল সেন্টার

লেখক:
প্রকাশ: ২ মাস আগে

সংকট সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার একমাত্র মেডিকেল সেন্টার ‘ব্যথার দান’। সম্প্রতি মেডিকেল সেন্টারে ঔষধ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রয়োজনীয় ঔষধের অভাবে শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এমনকি প্যারাসিটামল কিংবা গ্যাস্ট্রিকের ঔষধও মিলছে না।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, অনেকদিন ধরে একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। সামান্য থেকে গুরুতর যেকোনো অসুস্থতার জন্য শিক্ষার্থীদের যেতে হয় স্থানীয় ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি গ্রুপে এক পোস্টে শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান হৃদয় অভিযোগ করেন, ব্যথার দান মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। কিছু কর্মচারি থাকলেও ডাক্তারদের পাওয়া যায় না। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঔষধ না পাওয়ার এই দুর্ভোগের শেষ কোথায়? কিছুদিন পরপরই এধরণের অভিযোগ দেখতে পাওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ঠ ফেসবুক গ্রুপগুলোতে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৪টি বিভাগে আট হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী এবং তিন শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পরিবার রয়েছে। এই সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বিপরীতে চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছে ব্যথার দান মেডিক্যাল সেন্টার। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে বাড়েনি ব্যথার দান মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্টাফের সংখ্যা। বাড়েনি পর্যাপ্ত বরাদ্দও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্টাফ সংকটের কারণে একটি নির্দিষ্ট সময়ে খোলা থাকে ব্যথার দান। বাকি সময় বন্ধ থাকে। সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও শনিবার সার্বক্ষণিক এবং বাকি দিনগুলোতে বিকাল ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে মেডিকেল সেন্টার। এই বন্ধ সময়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিপাকে পড়তে হয় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের।

এদিকে দশ হাজার ভুক্তভোগীর বিপরীতে রোগীদের সার্বক্ষণিক পরিবহন সেবার জন্য রয়েছে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স। যা সবসময় না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়টি শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে। ফলে একই সময়ে একাধিক শিক্ষার্থী অ্যাম্বুলেন্স কল করলে প্রায়ই বিপাকে পড়েন বলে জানান অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারও।

এছাড়াও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও রোগ নির্ণয়ের জন্য নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে গুরুতর রোগে আক্রান্ত রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্ট স্টাফদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুল রাকিব ব্যথার দান নিয়ে অভিযোগ তুলে বলেন, আমরা প্রয়োজনের সময় সেবা পাই না। যেকোনো সময় যেকোনো শিক্ষার্থীর অসুস্থ হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্ত প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবারহে তারা সবসময়েই অবহেলা করেন। আবার রাতের বেলা তো মেডিকেল সেন্টার বন্ধই থাকে।

মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফরা জানান, স্টকের সব ঔষধ ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে ঔষধের বরাদ্দ না পাওয়ায় তারা ঔষধ সংগ্রহ করতে পারছেন না। বাকটা ডাক্তারদের সাথে আলোচনা করলে জানা যাবে।

গত বুধবার বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে ব্যথার দান মেডিকেল সেন্টারে একটি অভিযান চালানো হলেও সে সময় দপ্তরে পাওয়া যায়নি কোনো ডাক্তারকেই। পুরো আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪ জন চিকিৎসকের প্রত্যেকেই ছিল অনুপস্থিত।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বারংবার মুঠোফোনে মেডিকেল সেন্টারের উপ-প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও এব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি। তবে সংকট সমাধানে কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষা এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন: